০৯:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

রাজশাহীর দুর্গাপুরের ঐতিহ্যবাহী ঘোড়াদহ মেলা শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার থাকছে নানা আয়োজন

হাসিবুর রহমান/এম আর মানিকঃ
  • আপডেট সময়ঃ ০৮:২২:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১৪৯ বার পড়া হয়েছে।

হাসিবুর রহমান/এম আর মানিকঃ

রাজশাহীর দুর্গাপুরের রাইচাঁদ নদীর সেই ভরা যৌবন আর নেই। নাব্যতা সংকটে খরস্রোতা নদী এখন পরিণত হয়েছে মরা খালে। এক সময় রাইচাঁদ নদীতেই হতো নৌকা বাইচ। আর তীরে হতো ঘোড় দৌড়। সেই নৌকা বাইচ ও ঘোড় দৌড়কে কেন্দ্র করে পাশের মাঠেই বসতো বিশাল গ্রামীণ মেলা। যেই কারণে এই মেলার নামকরণ হয়েছিল ‘ঘোড়াদহ মেলা’।

আজ সেই নৌকা বাইচ নেই, নেই ঘোড় দৌড়ও। তবে সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এখনও বসছে গ্রামীণ ‘ঘোড়াদহ মেলা’।

আর দুর্গাপুর উপজেলার উজান খলসী গ্রামের ঘোড়াদহ মেলার রয়েছে সুদীর্ঘ পাঁচশ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। অন্তত তিন পুরুষ থেকে এই ঘোড়াদহ মেলার ইতিকথা শুনে বড় হয়েছেন এই অঞ্চলে থাকা আজকের প্রৌঢ়রা। তার আগের ইতিহাস সবার স্মৃতিতে আজও আটকে আছে আবছায়ার মতো।

প্রতিবছর আশ্বিন মাসের শেষ দিন দুর্গাপুর উপজেলায় শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়াদহ মেলা। কোনো রকম প্রচার ছাড়াই শত শত বছর ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা মেলায় আসেন, দোকানপাট নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন। মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের প্রায় ১৫টি গ্রামে চলে উৎসবের আমেজ।

একসময় দীর্ঘদিন চলত মেলাটি। উপজেলা-জেলা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসত। কিন্তু গত কয়েক বছরে মেলার জৌলুশ কমেছে, আর করোনায় সেটা আরও নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছে।

দুর্গাপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে কিসমতগণকৈড় ইউনিয়নের উজালখলসী গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া আইচান নদীর পাড়ে বসে মেলাটি।

প্রতিবছরের মতো এ বছরেও চলছে মেলা প্রস্তুতির আয়োজন । এইবার আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার দুদিন চলবে মেলা।

মেলার এলাকা ঘিরে থাকায় এই অঞ্চলের ১০/১৫ গ্রামের মুরব্বিদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, এই মেলার বয়স প্রায় ৬০০ বছর। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, জন্মের পর থেকে তাঁরা মেলাটি দেখছেন। তাঁদের বাপ-দাদারাও ছোটবেলা থেকে এই মেলা দেখে বড় হয়েছেন। তাঁদের পূর্বপুরুষেরাও একই কথা বলেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা, প্রবীণ ব্যক্তি তরিকুল ইসলাম বলেন, তাঁর দাদাও বলতে পারেননি ঘোড়াদহ মেলাটি ঠিক কবে শুরু হয়েছে। তবে শত শত বছর ধরে এভাবেই আইচান নদী ঘিরে বসছে মেলা।

কিশমত গনকৈড় ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নদীর পাড়ের বিশাল জায়গাজুড়ে মেলা বসত। মেলা উপলক্ষে দুই শর ওপর গরু-মহিষ জবাই করা হতো। আত্মীয়স্বজনে ভরে থাকত বাড়ি। পুরো এলাকায় চলত খাওয়া-দাওয়ার মহোৎসব। কিন্তু বর্তমানে আর আগের মতো উৎসবমুখর নেই মেলার পরিবেশ।

ঘোড়াদহ মেলা কমিটির সভাপতি বলেন, দুই দিনব্যাপী এ মেলা গত শনিবার শুরু হয়েছে। তবে ফার্নিচারসহ লোপ-তোশকের দোকানপাট মাসব্যাপী থাকবে। তিনি জানান, কমিটির মাধ্যমে মেলাটি পরিচালনা করা হয়। গ্রামের জনসাধারণের সম্মতিতে গঠন করা হয় সেই কমিটি। মেলা থেকে উপার্জিত আয় ব্যয় করা হয় গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কল্যাণে, গ্রামের মানুষের ট্যাক্স পরিশোধে ও অন্যান্য সেবামূলক কাজে।

নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজাদ আলী বলেন, প্রতিবছরই আশ্বিন মাসের শেষ তারিখে মেলা বসে, কোনো রকম ঘোষণা ও মাইকিং ছাড়াই। আগে মেলা উপলক্ষে আইচান নদীতে নৌকাবাইচ হতো। কয়েক বছর ধরে মেলায় আর কোনো জৌলুশ নেই। কারণ, গান-বাজনা নিষিদ্ধ হওয়ায় মেলার আকর্ষণ নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া করোনার প্রকোপের ফলে মেলায় দর্শনার্থী কমে গেছে।

ট্যাগসঃ

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আপলোডকারীর তথ্য

রাজশাহীর দুর্গাপুরের ঐতিহ্যবাহী ঘোড়াদহ মেলা শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার থাকছে নানা আয়োজন

আপডেট সময়ঃ ০৮:২২:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

হাসিবুর রহমান/এম আর মানিকঃ

রাজশাহীর দুর্গাপুরের রাইচাঁদ নদীর সেই ভরা যৌবন আর নেই। নাব্যতা সংকটে খরস্রোতা নদী এখন পরিণত হয়েছে মরা খালে। এক সময় রাইচাঁদ নদীতেই হতো নৌকা বাইচ। আর তীরে হতো ঘোড় দৌড়। সেই নৌকা বাইচ ও ঘোড় দৌড়কে কেন্দ্র করে পাশের মাঠেই বসতো বিশাল গ্রামীণ মেলা। যেই কারণে এই মেলার নামকরণ হয়েছিল ‘ঘোড়াদহ মেলা’।

আজ সেই নৌকা বাইচ নেই, নেই ঘোড় দৌড়ও। তবে সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এখনও বসছে গ্রামীণ ‘ঘোড়াদহ মেলা’।

আর দুর্গাপুর উপজেলার উজান খলসী গ্রামের ঘোড়াদহ মেলার রয়েছে সুদীর্ঘ পাঁচশ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। অন্তত তিন পুরুষ থেকে এই ঘোড়াদহ মেলার ইতিকথা শুনে বড় হয়েছেন এই অঞ্চলে থাকা আজকের প্রৌঢ়রা। তার আগের ইতিহাস সবার স্মৃতিতে আজও আটকে আছে আবছায়ার মতো।

প্রতিবছর আশ্বিন মাসের শেষ দিন দুর্গাপুর উপজেলায় শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়াদহ মেলা। কোনো রকম প্রচার ছাড়াই শত শত বছর ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা মেলায় আসেন, দোকানপাট নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন। মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের প্রায় ১৫টি গ্রামে চলে উৎসবের আমেজ।

একসময় দীর্ঘদিন চলত মেলাটি। উপজেলা-জেলা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসত। কিন্তু গত কয়েক বছরে মেলার জৌলুশ কমেছে, আর করোনায় সেটা আরও নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছে।

দুর্গাপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে কিসমতগণকৈড় ইউনিয়নের উজালখলসী গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া আইচান নদীর পাড়ে বসে মেলাটি।

প্রতিবছরের মতো এ বছরেও চলছে মেলা প্রস্তুতির আয়োজন । এইবার আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার দুদিন চলবে মেলা।

মেলার এলাকা ঘিরে থাকায় এই অঞ্চলের ১০/১৫ গ্রামের মুরব্বিদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, এই মেলার বয়স প্রায় ৬০০ বছর। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, জন্মের পর থেকে তাঁরা মেলাটি দেখছেন। তাঁদের বাপ-দাদারাও ছোটবেলা থেকে এই মেলা দেখে বড় হয়েছেন। তাঁদের পূর্বপুরুষেরাও একই কথা বলেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা, প্রবীণ ব্যক্তি তরিকুল ইসলাম বলেন, তাঁর দাদাও বলতে পারেননি ঘোড়াদহ মেলাটি ঠিক কবে শুরু হয়েছে। তবে শত শত বছর ধরে এভাবেই আইচান নদী ঘিরে বসছে মেলা।

কিশমত গনকৈড় ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নদীর পাড়ের বিশাল জায়গাজুড়ে মেলা বসত। মেলা উপলক্ষে দুই শর ওপর গরু-মহিষ জবাই করা হতো। আত্মীয়স্বজনে ভরে থাকত বাড়ি। পুরো এলাকায় চলত খাওয়া-দাওয়ার মহোৎসব। কিন্তু বর্তমানে আর আগের মতো উৎসবমুখর নেই মেলার পরিবেশ।

ঘোড়াদহ মেলা কমিটির সভাপতি বলেন, দুই দিনব্যাপী এ মেলা গত শনিবার শুরু হয়েছে। তবে ফার্নিচারসহ লোপ-তোশকের দোকানপাট মাসব্যাপী থাকবে। তিনি জানান, কমিটির মাধ্যমে মেলাটি পরিচালনা করা হয়। গ্রামের জনসাধারণের সম্মতিতে গঠন করা হয় সেই কমিটি। মেলা থেকে উপার্জিত আয় ব্যয় করা হয় গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কল্যাণে, গ্রামের মানুষের ট্যাক্স পরিশোধে ও অন্যান্য সেবামূলক কাজে।

নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজাদ আলী বলেন, প্রতিবছরই আশ্বিন মাসের শেষ তারিখে মেলা বসে, কোনো রকম ঘোষণা ও মাইকিং ছাড়াই। আগে মেলা উপলক্ষে আইচান নদীতে নৌকাবাইচ হতো। কয়েক বছর ধরে মেলায় আর কোনো জৌলুশ নেই। কারণ, গান-বাজনা নিষিদ্ধ হওয়ায় মেলার আকর্ষণ নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া করোনার প্রকোপের ফলে মেলায় দর্শনার্থী কমে গেছে।