০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

রাজশাহীতে ৪৬২টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা, থাকছে প্রশাসনের কঠোর নজরদারী

মনিরুল ইসলাম, রাজশাহীঃ
  • আপডেট সময়ঃ ০৯:৫৭:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৫৯ বার পড়া হয়েছে।

মনিরুল ইসলাম, রাজশাহীঃ
মায়ের আঁচল ছোঁয়া শুভ্র কাশবন আর আকাশের কপালজুড়ে লালচে সিঁথির সিঁদুর জানান দিচ্ছে দেবীপক্ষের। দেবী মায়ের মর্ত্যে আগমনের বার্তায় প্রকৃতির এ সাজে চারিদিকে যেন চলছে আনন্দযজ্ঞ। আর ক’দিন বাদেই আসছেন ‘মা দুর্গা’, দুর্গতি নাশিনী। তাতেই মূর্তমান করে তুলতে ব্যস্ত শিল্পীরা।

ঢাকের তালে আর শিউলি ফুলের মিষ্টি গন্ধে পুরো দেশে দুর্গাপূজার হাওয়া বইতে থাকে। দেবী দুর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে মাসখানেক থেকে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। শারদীয় দুর্গাপূজা সনাতন বাঙালি ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব হিসেবে পালিত হয়। এবার দেবী দুর্গা গজে (হাতি) চড়ে আসবেন, যা শান্তি, সমৃদ্ধি ও শস্য-শ্যামলার প্রতীক। তবে তার গমন হবে দোলায়, যা মহামারি বা মড়কের ইঙ্গিত বহন করে।
সরেজমিনে বিভিন্ন ম-পে ঘুরে দেখা গেছে, খড়, কাঠ, সুতা আর মাটি দিয়ে নিপুণ হাতে কারিগররা তৈরি করছেন প্রতিমা। পূজা যতই ঘনিয়ে আসছে, শিল্পীদের ব্যস্ততা ততটাই বাড়ছে। কারিগররা ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ-কার্তিক ও অসুরের মূর্তি। কিছু কিছু প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে শুরু হয়েছে রঙের কাজ।

রাজশাহীতে ৪৬২টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৩৮২টি ম-প গ্রামীণ এলাকায় এবং ৮০টি মন্ডপ মহানগরে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠির মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসবের। শেষ হবে ২ অক্টোবর দশমীতে। দুর্গোৎসবকে শান্তিপূর্ণ করতে নিরাপত্তাসহ প্রশাসন থেকে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এবারও রাজনৈতিক দলগুলো মন্ডপ পাহারাসহ বিশেষ নজরদারি করবে।

কার্তিকচন্দ্র পাল দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রতিমা তৈরি করে আসছেন। তিনি জানালেন, বছরজুড়ে চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করেন লক্ষ্মী, সরস্বতী, কালী এবং দুর্গা প্রতিমা। তবে গেল বছরের চেয়ে এবার কমেছে প্রতিমার চাহিদা। পাশাপাশি প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত বাঁশ, কাঠ, খড়, সাজসজ্জার উপকরণের দাম ও শিল্পীদের মজুরি খরচ বেড়েছে। সেই তুলনায় কমেছে লাভ। কার্তিক পাল বলেন, কর্মচারী বেতন থেকে প্রতিমা বানানোর উপকরণের সবকিছুর দাম বেড়েছে। গহনা, রঙ এইগুলো বাহির থেকে আমদানি করতাম, সেগুলো এবার করতে পারছি না।
তাই রাত দিন এক করে কাজ করছেন কারিগররা। প্রতিমার গায়ে নকশা কাটার পাশাপাশি রঙের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তবে এবার ভারত থেকে প্রতিমার সাজ-সরঞ্জামাদি আমদানি করতে না পারায় কারিগররা পড়েছেন বিপাকে।

প্রতিমা কারিগরদের একজন বলেন, আগে একটা প্রতিমা বিক্রি হতো ৫০ হাজার টাকার মতো। দেশের এই পরিস্থিতির কারণে প্রতিমার যে দাম তা পাওয়া যাচ্ছে না। অতীতে যেভাবে মানুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করতো, সেই চাহিদা না থাকায় আমাদের প্রায় সারা বছরই অলস সময় কাটাতে হয়। তবে দুর্গাপূজা চলাকালে প্রতিমা তৈরি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে সারা বছর সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। আবার চলতি বছর প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা প্রতিমার দাম বাড়াচ্ছে না। এতে আমাদের যে টাকা আয় হওয়ার কথা, তা আর হচ্ছে না।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ফ্রন্টের রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার সাহা বলেন, এবারের পূজায় প্রশাসন থেকে আমাদের নিরাপত্তার জন্য শতভাগ নিশ্চিয়তা দিয়েছে। রাজশাহীতে যে পাঁচটি স্থানে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে সেগুলোতে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ টহল দিচ্ছে। এতে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কারিগররা। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর পূজাম-প বেড়েছে। পূজা চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও তৎপর থাকবেন। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে সহযোগিতা করা হবে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, পূজাকে ঘিরে প্রতিটি মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে জোরেশোরে। পূজা যেন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়, সে জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে। প্রতিটি মন্ডপে পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি র‌্যাবের টহল থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হবে।

ট্যাগসঃ

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আপলোডকারীর তথ্য

রাজশাহীতে ৪৬২টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা, থাকছে প্রশাসনের কঠোর নজরদারী

আপডেট সময়ঃ ০৯:৫৭:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মনিরুল ইসলাম, রাজশাহীঃ
মায়ের আঁচল ছোঁয়া শুভ্র কাশবন আর আকাশের কপালজুড়ে লালচে সিঁথির সিঁদুর জানান দিচ্ছে দেবীপক্ষের। দেবী মায়ের মর্ত্যে আগমনের বার্তায় প্রকৃতির এ সাজে চারিদিকে যেন চলছে আনন্দযজ্ঞ। আর ক’দিন বাদেই আসছেন ‘মা দুর্গা’, দুর্গতি নাশিনী। তাতেই মূর্তমান করে তুলতে ব্যস্ত শিল্পীরা।

ঢাকের তালে আর শিউলি ফুলের মিষ্টি গন্ধে পুরো দেশে দুর্গাপূজার হাওয়া বইতে থাকে। দেবী দুর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে মাসখানেক থেকে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। শারদীয় দুর্গাপূজা সনাতন বাঙালি ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব হিসেবে পালিত হয়। এবার দেবী দুর্গা গজে (হাতি) চড়ে আসবেন, যা শান্তি, সমৃদ্ধি ও শস্য-শ্যামলার প্রতীক। তবে তার গমন হবে দোলায়, যা মহামারি বা মড়কের ইঙ্গিত বহন করে।
সরেজমিনে বিভিন্ন ম-পে ঘুরে দেখা গেছে, খড়, কাঠ, সুতা আর মাটি দিয়ে নিপুণ হাতে কারিগররা তৈরি করছেন প্রতিমা। পূজা যতই ঘনিয়ে আসছে, শিল্পীদের ব্যস্ততা ততটাই বাড়ছে। কারিগররা ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ-কার্তিক ও অসুরের মূর্তি। কিছু কিছু প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে শুরু হয়েছে রঙের কাজ।

রাজশাহীতে ৪৬২টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৩৮২টি ম-প গ্রামীণ এলাকায় এবং ৮০টি মন্ডপ মহানগরে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠির মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসবের। শেষ হবে ২ অক্টোবর দশমীতে। দুর্গোৎসবকে শান্তিপূর্ণ করতে নিরাপত্তাসহ প্রশাসন থেকে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এবারও রাজনৈতিক দলগুলো মন্ডপ পাহারাসহ বিশেষ নজরদারি করবে।

কার্তিকচন্দ্র পাল দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রতিমা তৈরি করে আসছেন। তিনি জানালেন, বছরজুড়ে চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করেন লক্ষ্মী, সরস্বতী, কালী এবং দুর্গা প্রতিমা। তবে গেল বছরের চেয়ে এবার কমেছে প্রতিমার চাহিদা। পাশাপাশি প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত বাঁশ, কাঠ, খড়, সাজসজ্জার উপকরণের দাম ও শিল্পীদের মজুরি খরচ বেড়েছে। সেই তুলনায় কমেছে লাভ। কার্তিক পাল বলেন, কর্মচারী বেতন থেকে প্রতিমা বানানোর উপকরণের সবকিছুর দাম বেড়েছে। গহনা, রঙ এইগুলো বাহির থেকে আমদানি করতাম, সেগুলো এবার করতে পারছি না।
তাই রাত দিন এক করে কাজ করছেন কারিগররা। প্রতিমার গায়ে নকশা কাটার পাশাপাশি রঙের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তবে এবার ভারত থেকে প্রতিমার সাজ-সরঞ্জামাদি আমদানি করতে না পারায় কারিগররা পড়েছেন বিপাকে।

প্রতিমা কারিগরদের একজন বলেন, আগে একটা প্রতিমা বিক্রি হতো ৫০ হাজার টাকার মতো। দেশের এই পরিস্থিতির কারণে প্রতিমার যে দাম তা পাওয়া যাচ্ছে না। অতীতে যেভাবে মানুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করতো, সেই চাহিদা না থাকায় আমাদের প্রায় সারা বছরই অলস সময় কাটাতে হয়। তবে দুর্গাপূজা চলাকালে প্রতিমা তৈরি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে সারা বছর সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। আবার চলতি বছর প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা প্রতিমার দাম বাড়াচ্ছে না। এতে আমাদের যে টাকা আয় হওয়ার কথা, তা আর হচ্ছে না।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ফ্রন্টের রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার সাহা বলেন, এবারের পূজায় প্রশাসন থেকে আমাদের নিরাপত্তার জন্য শতভাগ নিশ্চিয়তা দিয়েছে। রাজশাহীতে যে পাঁচটি স্থানে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে সেগুলোতে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ টহল দিচ্ছে। এতে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কারিগররা। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর পূজাম-প বেড়েছে। পূজা চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও তৎপর থাকবেন। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে সহযোগিতা করা হবে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, পূজাকে ঘিরে প্রতিটি মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে জোরেশোরে। পূজা যেন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়, সে জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে। প্রতিটি মন্ডপে পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি র‌্যাবের টহল থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হবে।