১২:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

রাজশাহীতে পেয়াজ সংরক্ষণের জন্য চাষিদের দেওয়া হচ্ছে এয়ার ফ্লো মেশিন

মনিরুল ইসলাম, রাজশাহীঃ
  • আপডেট সময়ঃ ০৯:৫৫:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৩৮ বার পড়া হয়েছে।

মনিরুল ইসলাম, রাজশাহীঃ
বাড়িতেই ছয় থেকে আট মাস পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’ ব্যবহারের মাধ্যমে। ফলে সুবিধা মত সময়ে চাষীরা পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন। এতে করে অর্থিকভাবে চাষিরা লাভবান হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি অফিস। ফলে পেঁয়াজের গুনগত মান ও রঙ ভালো থাকবে।

রাজশাহী জেলায় ১৭০টি এয়ার ফ্লো মেশিন চাষিদের দেওয়া হবে। একটি এয়ার ফ্লো মেশিনের আওতায় ১০ ফুটের দৈর্ঘ্য-প্রস্তের ছয় ফুট আকারের ঘরে ২০০ থেকে ২৫০ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা সম্ভব। এয়ার ফ্লো মেশিনটি বিদ্যুতের সাহয্যে চলার কারণে অন্য কোনো খরচ নেই। ইতোমধ্যে ১৮০ জন পেঁয়াজ চাষীকে কৃষি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী জেলায় এবছর ২১ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছিল।

সংশ্লিষ্টরা জানায়- চাষিরা বাড়িতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। সেই পেঁয়াজ তারা বেশি দিন রাখতে পারে না। দ্রুত পচন ধরে। তাই ভালো দাম পান না। এই পদ্ধতিতে চাষী যে রুমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন সেখানে এয়ার ফ্লো মেশিন ব্যবহার করবেন। এতে করে ছয় থেকে আট মাস পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পাবেন চাষিরা। একই সঙ্গে পেঁয়াজের গুনগত মান ও রঙ ভালো থাকবে।
জানা গেছে- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের (বিসিপিটি) অর্থায়নে পরিচালিত এবং কৃষি সম্প্রসারণ কর্তৃক বাস্তবায়িত বাংলাদেশের পেঁয়াজ উৎপাদন এলাকায় পরিবর্তিত জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব প্রশমনে অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হল রুমে ৩দিনব্যাপি কৃষি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।

সোমবার (১৫ সেপ্টম্বর) সকালে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ১৬টি প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলায় মোট ৩৭০০ টি এয়ার ফ্লো মেশিন সরবরাহ করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণের আওতায় আনা হবে এবং বাংলাদেশ পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।

তিনি বলেন, কৃষক নিজে তার বাড়িতে ১০ ফুট ১০ ফুট ৬ ফুট আকারের ইটের দেওয়াল তৈরি করবে এবং প্রকল্প থেকে এয়ার ফ্লো মেশিন ক্রয় ও পেঁয়াজ সংরক্ষণের মাচা তৈরি বাবদ কৃষকের ব্যাংক হিসাবে প্রত্যেককে ২৭ হাজার টাকা প্রদান করা হবে। কৃষক তার পছন্দ মতো কোম্পানি থেকে প্রকল্প কর্তৃক প্রদত্ত স্পেসিফিকেশন মোতাবেক এয়ার ফ্লো মেশিন সংগ্রহ করবেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ লাখ মে.টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। কিন্তু উপযুক্ত পদ্ধতিতে সংরক্ষণের অভাবে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ মে.টন পেঁয়াজ পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। উৎপাদিত পেঁয়াজ ব্যবহৃত হয় মাত্র ২৫ থেকে ২৮ লাখ মেট্রিক টন। আর আমাদের চাহিদা বার্ষিক ৩০ থেকে ৩২ লাখ মে.টন। বেশি উৎপাদন করার পরেও প্রতিবছর শুধুমাত্র ৪ থেকে ৭ লাখ মে.টন আমদানি করতে হয়। ফলে কখনও কখনও পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। পরে এয়ার ফ্লো মেশিনের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারলে পেঁয়াজ আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব।

দুর্গাপুরের পেঁয়াজ চাষী সাইফুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজ পচনরোধে এই প্রযুক্তির ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। এরফলে পেঁয়াজ বেশি দিন সংরক্ষণ করা সম্ভব। এই সংরক্ষণের তেমন খরচ নেই। কৃষি অফিস এয়ার ফ্লো মেশিন সরবরাহ করবে। যেহেতু এখনও ব্যবহার করা হয়নি এই প্রযুক্তি। তার এর সুফল সেইভাবে বলা যাচ্ছে না।

স্বাগত বক্তব্য দেন, রাজশাহী অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক, ড. মো. মাহফুজুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছা. উম্মে ছালমা। অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিভিন্ন উপজেলার পেঁয়াজ চাষীরা অংশ নেয়। কৃষক প্রশিক্ষণের সময় বিভিন্ন জেলার ৮টি এয়ার ফ্লো মেশিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেন।

ট্যাগসঃ

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আপলোডকারীর তথ্য

রাজশাহীতে পেয়াজ সংরক্ষণের জন্য চাষিদের দেওয়া হচ্ছে এয়ার ফ্লো মেশিন

আপডেট সময়ঃ ০৯:৫৫:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মনিরুল ইসলাম, রাজশাহীঃ
বাড়িতেই ছয় থেকে আট মাস পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’ ব্যবহারের মাধ্যমে। ফলে সুবিধা মত সময়ে চাষীরা পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন। এতে করে অর্থিকভাবে চাষিরা লাভবান হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি অফিস। ফলে পেঁয়াজের গুনগত মান ও রঙ ভালো থাকবে।

রাজশাহী জেলায় ১৭০টি এয়ার ফ্লো মেশিন চাষিদের দেওয়া হবে। একটি এয়ার ফ্লো মেশিনের আওতায় ১০ ফুটের দৈর্ঘ্য-প্রস্তের ছয় ফুট আকারের ঘরে ২০০ থেকে ২৫০ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা সম্ভব। এয়ার ফ্লো মেশিনটি বিদ্যুতের সাহয্যে চলার কারণে অন্য কোনো খরচ নেই। ইতোমধ্যে ১৮০ জন পেঁয়াজ চাষীকে কৃষি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী জেলায় এবছর ২১ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছিল।

সংশ্লিষ্টরা জানায়- চাষিরা বাড়িতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। সেই পেঁয়াজ তারা বেশি দিন রাখতে পারে না। দ্রুত পচন ধরে। তাই ভালো দাম পান না। এই পদ্ধতিতে চাষী যে রুমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন সেখানে এয়ার ফ্লো মেশিন ব্যবহার করবেন। এতে করে ছয় থেকে আট মাস পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পাবেন চাষিরা। একই সঙ্গে পেঁয়াজের গুনগত মান ও রঙ ভালো থাকবে।
জানা গেছে- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের (বিসিপিটি) অর্থায়নে পরিচালিত এবং কৃষি সম্প্রসারণ কর্তৃক বাস্তবায়িত বাংলাদেশের পেঁয়াজ উৎপাদন এলাকায় পরিবর্তিত জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব প্রশমনে অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হল রুমে ৩দিনব্যাপি কৃষি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।

সোমবার (১৫ সেপ্টম্বর) সকালে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ১৬টি প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলায় মোট ৩৭০০ টি এয়ার ফ্লো মেশিন সরবরাহ করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণের আওতায় আনা হবে এবং বাংলাদেশ পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।

তিনি বলেন, কৃষক নিজে তার বাড়িতে ১০ ফুট ১০ ফুট ৬ ফুট আকারের ইটের দেওয়াল তৈরি করবে এবং প্রকল্প থেকে এয়ার ফ্লো মেশিন ক্রয় ও পেঁয়াজ সংরক্ষণের মাচা তৈরি বাবদ কৃষকের ব্যাংক হিসাবে প্রত্যেককে ২৭ হাজার টাকা প্রদান করা হবে। কৃষক তার পছন্দ মতো কোম্পানি থেকে প্রকল্প কর্তৃক প্রদত্ত স্পেসিফিকেশন মোতাবেক এয়ার ফ্লো মেশিন সংগ্রহ করবেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ লাখ মে.টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। কিন্তু উপযুক্ত পদ্ধতিতে সংরক্ষণের অভাবে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ মে.টন পেঁয়াজ পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। উৎপাদিত পেঁয়াজ ব্যবহৃত হয় মাত্র ২৫ থেকে ২৮ লাখ মেট্রিক টন। আর আমাদের চাহিদা বার্ষিক ৩০ থেকে ৩২ লাখ মে.টন। বেশি উৎপাদন করার পরেও প্রতিবছর শুধুমাত্র ৪ থেকে ৭ লাখ মে.টন আমদানি করতে হয়। ফলে কখনও কখনও পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। পরে এয়ার ফ্লো মেশিনের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারলে পেঁয়াজ আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব।

দুর্গাপুরের পেঁয়াজ চাষী সাইফুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজ পচনরোধে এই প্রযুক্তির ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। এরফলে পেঁয়াজ বেশি দিন সংরক্ষণ করা সম্ভব। এই সংরক্ষণের তেমন খরচ নেই। কৃষি অফিস এয়ার ফ্লো মেশিন সরবরাহ করবে। যেহেতু এখনও ব্যবহার করা হয়নি এই প্রযুক্তি। তার এর সুফল সেইভাবে বলা যাচ্ছে না।

স্বাগত বক্তব্য দেন, রাজশাহী অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক, ড. মো. মাহফুজুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছা. উম্মে ছালমা। অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিভিন্ন উপজেলার পেঁয়াজ চাষীরা অংশ নেয়। কৃষক প্রশিক্ষণের সময় বিভিন্ন জেলার ৮টি এয়ার ফ্লো মেশিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেন।