বাঘা মীরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ ছাদ থেকে ঘসে পড়ে পলেস্তারা, ঝুঁকি নিয়ে শিশুদের পাঠদান!
- আপডেট সময়ঃ ০৬:৫৮:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৫৯ বার পড়া হয়েছে।

ডিপিডি বিশেষ প্রতিবেদক:
ভাঙা ছাদ থেকে প্রায়ই খসে পড়ে পলেস্তারা। কোথাও কোথাও বেরিয়ে আছে রড। বৃষ্টি এলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। ছাদের পাশাপাশি ফাটল ধরেছে বিমেও। সামান্য খোঁচা দিলেই পলেস্তারা ঝুরঝুরিয়ে পড়তে থাকে। এর মধ্যেই ভবনধসের ঝুঁকি নিয়ে শিশুদের পাঠদান করেন শিক্ষকরা। সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয় মা-বাবাকেও।
এমন চিত্র রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের মীরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের। আতঙ্কের কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারছেন না বলে জানান সহকারী শিক্ষকরা। বারবার সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও মেলেনি সমাধান। তাদের ভাষ্য, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, পাশাপাশি তাদের উপস্থিতিও কমছে। দুর্ঘটনা ঘটলে বের হওয়াও দুস্কর।
ওই বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে ভানুকর এলাকার জারা খাতুন। তার মা মুক্তা বেগম বলেন, বিদ্যালয় ভবনের ছাদের নীচে ফাটল ধরেছে। রডও দেখা যায়। সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে বাড়িতে থাকতে হয় দুর্ঘটনার আশঙ্কায়। অভিভাবকদের কেউ কেউ সন্তানকে স্কুলে দিয়ে ছুটি হওয়া পর্যন্ত বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন। শিশুদের কথা চিন্তা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণে সরকারের কাছে দাবি করেছেন তারা।
বুধবার (১০-০৯-২০২৫) বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, খুদে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস করছে। তাদের কক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে আছে। এ ছাড়া পাশের আরেকটি কক্ষের বিমেও রয়েছে ফাটল-পলেস্তারাও খসে পড়েছে। বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ে শ্যাওলা জমেছে। এসব কক্ষ স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে। ছাদ থেকে বইয়ের ওপর ঝুরঝুরিয়ে পড়ছে বালু-সিমেন্টের কণা।
৫ম শ্রেণির আনাম,সাইমুনা নামের শিক্ষার্থীরা জানায়, বর্ষাকালে জল পড়ে, বালু পড়ে। ক্লাস করতে তাদের ভীষণ ভয় করে। কখন যে তাদের ওপর ভেঙে পড়ে! চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী পল্লব,আশিক বলেন, ‘যখন ক্লাস করি, তখন অনেক সময় ওপর থেকে বালু আর ইটের কণা পড়ে। গত সোমবার মাথায় খোয়া পড়েছে। কষ্টের মধ্যে এভাবে ক্লাস করতে একদম ভালো লাগে না। সরকার যেন দ্রুত তাদের বিদ্যালয়ের জন্য নতুন ভবন করে দেয়, সেই আকুতি তাদের।
জানা যায়, ১৮১১ সালে উপজেলার মীরগঞ্জ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় মীরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বর্তমানে এখানে পড়ছে ৩৫০ জন ছাত্রছাত্রী। তাদের বিপরীতে শিক্ষকসংখ্যা ১০। বিদ্যালয়টির শুরুর দিকে টিনসেটের একটি ভবন ছিল। ২০১৯ সালে সেই ভবনটি নিলামে বিক্রি করা হয়েছে।
১৯৯৪ সালে চার কক্ষের ভবনটি তৈরি করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। তিনটি কক্ষে প্রাক প্রাথমিক,প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ক্লাস চলে। অপরটিতে শিক্ষা উপকরণ রাখা আছে। ১৯৯৬ সালে নির্মিত দুই কক্ষ বিশিষ্ট ভবনের একটিতে ৪র্থ শ্রেণী অপরটিতে ৫ম শ্রেণীর ক্লাস চলে। ২০০৪ সালে দুই কক্ষের ভবন নির্মাণ করা হয়। যার একটিতে তৃতীয় শ্রেণী অপরটিতে অফিস কক্ষ। বিদ্যালটির তিনটি ভবনের ৬ টি শ্রেণীকক্ষের ৫টি ঝুকিপূর্ণ।
ভবনের ছাদ এখন বড় আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কার কথা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান মেলেনি।
সহকারী শিক্ষিকা রুকসানা খাতুন বলেন, আমাদের ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে নাজুক। আমরা ঠিকমতো ক্লাস নিতে পারছি না। কয়েকদিন আগেও ২য় শ্রেনীর কক্ষে ছাদের মরিচা ধরা রড ভেঙে সিলিং ফ্যান পড়ে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আমরা সবাই আতঙ্কে থাকি। তা ছাড়া বৃষ্টির দিনে পানি পড়তে থাকে। ক্লাস নিতে পারি না। শিশুদের বই-খাতা ভিজে যায়। এ অবস্থা থেকে মুক্তি চান তিনি।
আরেক সহকারী শিক্ষক নাসির উদ্দীন বলেন, শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস করতে হয় বলে ওদের পড়ায় মনোযোগ থাকে না। এমনিতে বিদ্যালয়ে পড়ার পরিবেশ ভালো। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে দিন দিন শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের একটি ভবন দরকার।
প্রধান শিক্ষক পারভিন নাহার জানান বিষয়টি বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু কেন সমাধান হচ্ছে না এমন প্রশ্নের উত্তর তাঁরও অজানা। । তাঁর ভাষ্য, ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে নাজুক অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ আমাদের এভাবেই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
পারভিন নাহার বলেন, আমরা সুন্দর পরিবেশে সুন্দর অবকাঠামোর সুন্দর একটি বিদ্যালয় চাই। ছোট সোনামণিদের কথা চিন্তা করে দ্রুত নতুন ভবন তৈরি হোক।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মীর মামুনুর রহমান জানান,শিক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভবন নির্মাণের বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। কি কারণে আসেনি আমার জানা নেই। তবে গত মে মাসে শিক্ষা কমিটির সভায় উপজেলার যে কয়েকটি বিদ্যালয়ের নাম উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকায় শিক্ষা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে,তার মধ্যে মীরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । প্রকল্প এলে নতুন ভবনের কাজ শুরু হবে বলে জানান এই শিক্ষা অফিসার।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মী আক্তার বলেন, যে স্কুল গুলো সংস্কারের প্রয়োজন, শিক্ষা কমিটির সভায় সেগুলোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়েছে।

















