বাংলাদেশ ব্যাংকে পবিত্র সীরাতুন্নবী (সা.) মাহফিল অনুষ্ঠিতঃ প্রধান আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ
- আপডেট সময়ঃ ০৭:৫৩:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
- / ৭৯ বার পড়া হয়েছে।

নিউজ ডেক্সঃ
*বাংলাদেশ ব্যাংকের সীরাত মাহফিলে শায়খ আহমাদুল্লাহর আহ্বান — ন্যায়, ইনসাফ ও শরীয়াহভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ*
বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত পবিত্র সীরাতুন্নবী (সা.) মাহফিলে দেশবরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদ ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ হাফিযাহুল্লাহ শরীয়তের উদ্দেশ্য, ইসলামী ব্যাংকিং বাস্তবায়ন এবং আর্থিক লেনদেনে ন্যায়ের অনুশীলন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. জাকির হোসেন চৌধুরী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক কেন্দ্রীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. আনিছুর রহমান অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন এবং উপপরিচালক আফতাব উদ্দিন সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন। মাহফিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, শরীয়তের চারটি মৌলিক উদ্দেশ্য হলো—দ্বীনি আদর্শ সংরক্ষণ, জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা, সম্পদ সংরক্ষণ এবং মানবিক মর্যাদা রক্ষা। ইসলাম শুধু ইবাদতের ধর্ম নয়, বরং এটি ন্যায়, ইনসাফ ও মানবকল্যাণের এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। আমাদের অর্থনীতি, কর্মক্ষেত্র ও প্রশাসনে সেই ইনসাফের বাস্তবায়নই প্রকৃত ইসলামী চেতনা। তিনি লেনদেনে স্বচ্ছতা, হালাল উপার্জন, আমানতদারীতা ও ন্যায়ের চর্চার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং সাহাবায়ে কেরামের জীবন থেকে অর্থনৈতিক স্বচ্ছতার দৃষ্টান্ত অনুসরণের আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক শরীয়াহ বোর্ড গঠন এবং ইসলামী ব্যাংকিং রেগুলেশন ও পলিসি বিভাগ চালু করার উদ্যোগের প্রশংসা করে শায়খ আহমাদুল্লাহ গভর্নর ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। তিনি ইসলামী ব্যাংকিংয়ের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন—ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য পৃথক আইন প্রণয়ন, ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আস্থা পুনরুদ্ধার, যোগ্যতা ও সততার ভিত্তিতে দায়িত্ব বণ্টন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য শরীয়াহভিত্তিক বিনিয়োগ সুবিধা (বাড়ি নির্মাণ ও গাড়ি ক্রয়) চালু করা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ইসলামী ব্যাংকিংয়ের নীতিনির্ধারক প্রতিষ্ঠান, তাই নিজস্ব কর্মকর্তাদের জন্য শরীয়াহসম্মত বিনিয়োগ সুবিধা চালু করা কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব।
দায়িত্ব পালনে সততা ও নৈতিকতার গুরুত্ব তুলে ধরে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা যদি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করেন, তবে তা শুধু কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করবে না, বরং প্রতিষ্ঠানের নৈতিক মানও উঁচু করবে। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব। আমাদের জীবনের প্রতিটি সংকট ও সমস্যার সমাধান তাঁর সীরাতে নিহিত আছে। তাই প্রত্যেকের উচিত অন্তত জীবনে একবার হলেও নবীজির একটা সীরাতগ্রন্থ পাঠ করা, তা থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং জীবনে প্রয়োগ করা।
আমলের গুরুত্ব সম্পর্কে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, কোনো নেক আমলকেই ছোট করে দেখা উচিত নয়। এমনকি একটি গাছ রোপণ করাও আল্লাহর কাছে সওয়াবের কাজ। তিনি হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, যে ব্যবসায়ী সততা, ন্যায় ও আমানতের সঙ্গে ব্যবসা করে, কিয়ামতের দিন সে শহীদদের সঙ্গে হাশরের ময়দানে অবস্থান করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে ইসলামী মূল্যবোধ, নৈতিকতা, ন্যায়পরায়ণতা ও শরীয়াহভিত্তিক আর্থিক চেতনা জাগ্রত করতে এই সীরাত মাহফিলটি একটি অনন্য উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। শায়খ আহমাদুল্লাহর বক্তব্য উপস্থিত সবার মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং বহু কর্মকর্তা ইসলামী ব্যাংকিং ও শরীয়াহসম্মত জীবনাচারে অনুপ্রাণিত হয়েছেন।

















