রাবিতে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

- আপডেট সময়ঃ ০৩:৫৯:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫
- / ৫ বার পড়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি:
গাজীপুরের সাংবাদিক তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার ঘটনার বিচার ও সারাদেশে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকরা।
শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে এ বিক্ষোভ সমাবেশের করেন তারা । এসময় ইন্টেরিম সরকারের কাছে চারটি দাবি পেশ করেন তারা। দাবিগুলো হলো- দ্রুত সময়ের মধ্যে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে, নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে, সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে বাঁধা দেওয়ার জন্য শাস্তি স্বরুপ বাংলাদেশে সর্বোচ্চ আইন নিশ্চিত করতে, গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহত হওয়া সাংবাদিকদের তালিকা নিশ্চিত করে তাদের ব্যয়ভার নিশ্চিত করতে হবে।
রাবি প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা পোস্টের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি জুবায়ের জিসানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মনির হোসেন মাহিন বলেন, সাংবাদিক তুহিনকে প্রকাশ্যে যেভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তা আমরা সবাই দেখেছি। জুলাই-পরবর্তী সময়েও যদি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়—এই প্রশ্ন আমি ইন্টেরিম সরকারের কাছে রাখছি।
আজ আমাদের এখানে দাঁড়ানোর কথা নয়। এখন আমাদের রাষ্ট্র নিয়ে চিন্তা করার কথা, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার কথা। কিন্তু কেন আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি? আমরা দাঁড়িয়েছি—আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাইতে।
ইন্টেরিম সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, আপনারা গদিতে বসেছেন শুধু এসির হাওয়া খাওয়ার জন্য নয়। হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আপনারা এ গদিতে বসেছেন। যদি সেই দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তাহলে গদি ছেড়ে দিন। আপনাদের বাইরে বাংলাদেশে অনেক যোগ্য ব্যক্তি আছেন, যারা দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবেন এবং আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন। সাংবাদিকদের অবহেলার চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সাংবাদিকরা যেমন রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কলম দিয়ে লিখতে পারে, তেমনি প্রয়োজনে সেই কলমকে অস্ত্রে নিজেকে রক্ষাও করতে পারে। তাই আমরা বর্তমান সরকারকে সতর্ক করছি—এই ধরনের সাহস যেন আর কেউ না দেখাতে পারে, তার জন্য আমরা ন্যায়সঙ্গত ও যথাযথ বিচার চাই।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইরফান তামিম বলেন,দেশের যে বর্তমান আইন শৃঙ্খলা বিগত সরকারের আইন শৃঙ্খলার অবস্থার থেকে করুণ। আমরা ভেবেছিলাম গণঅভ্যুত্থানের সরকার রাষ্ট্রকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যাবে। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে। কিন্ত তারা পুরোপুরি ব্যর্থ।
তিনি আরও বলেন, আমরা গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যার যে বিষয়টি দেখেছি এটি সাংবাদিকদের উপর হয়ে যাওয়া নিয়মিত একটি ঘটনা। আমরা সাংবাদিকদের উপর হওয়া নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সোহাগ আলী বলেন, আমাদের এই ধরনের দাবি নিয়ে দাড়ানোর কথানা তাও এখানে দাড়াতে হচ্ছে। কারণ আজ পর্যন্ত যত সাংবাদিক হত্যা কিংবা নির্যাতনের শিকার হয়েছে সেগুলোর কোনো বিচার হয়নি। আমাদের দেশে যে বিচার হীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে সেখানে তারাও ধরে নিয়েছে সাংবাদিকদের হত্যা করলে এর কিছুই হবে না। রাষ্ট্র যদি এই বিচার হীনতার সংস্কৃতি থেকে বের না হতেভপারে তাহলে এমন হত্যাকান্ড বাড়তেই থাকবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে রাবি প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সৈয়দ সাকিব বলেন, “সাম্প্রতিক যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, এরকম নৃশংসভাবে সাংবাদিককে হত্যা—শেষ কবে হয়েছে আমার মনে পড়ে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে আমি বলতে চাই—আপনার কাছ থেকে একটি সুস্পষ্ট বার্তা আমরা শুনতে চাই। আপনি এই সংবাদকর্মীদের অভিভাবক, কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমরা আপনার কোনো প্রতিবাদ দেখিনি, এমনকি একটি ফেসবুক পোস্টও না। এভাবে একদম প্রকাশ্যে ও নৃশংসভাবে একজন সংবাদকর্মীকে হত্যার পরও আপনার পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য না আসা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
এসময় ক্যাম্পাসে কর্মরত ও শহরের সাংবাদিক মিলে প্রায় শতাধিক সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলন।