১১:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫

বাগমারায় ‘বন্ধুদের আড্ডা’ রেস্টুরেন্ট বদলে দিল তিন বন্ধুর জীবনের গল্প

শামীম রেজা, বাগমারা, (রাজশাহী):
  • আপডেট সময়ঃ ০৭:০৫:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫
  • / ১১ বার পড়া হয়েছে।

শামীম রেজা, বাগমারা, (রাজশাহী):

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল হাট গাঙ্গোপাড়ায় তিন বন্ধুর উদ্যোগে গড়ে উঠেছে একটি অনন্য রেস্টুরেন্ট, ‘বন্ধুদের আড্ডা’। এটি পশ্চিম বাগমারার হাট গাঙ্গোপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের একদম সামনে।

এই রেস্টুরেন্টটি দ্রুতই স্থানীয়দের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে এই জায়গাটি।

তিন বন্ধু বুলবুল আহমেদ, আব্দুল হাকিম নীরব এবং আব্দুল হান্নান। তিন বন্ধুর বাসা বাগমারার বিভিন্ন গ্রামে। তারা সবাই সরকারি চাকরি করে। তিন বন্ধুর মধ্যে বুলবুল আহমেদ যোগীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে, আব্দুল হাকিম নীরব রাজশাহীর মতিহার টেকনিক্যাল কলেজে এবং আব্দুল হান্নান খালগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক।

প্রতিষ্ঠা তারিখঃ ২০/১২/২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বন্ধুদের আড্ডা রেস্টুরেন্টে যাত্রা শুরু করে। সরকারি চাকরির পর অতিরিক্ত সময় কাজে লাগানোর সুযোগ খুজতে থাকে তিন বন্ধু। অবশেষে একটি সিদ্ধান্ত বদলে দিয়েছে তাদের জীবন।

তিন বন্ধুর স্বপ্ন আর পরিশ্রমের ফসল এই রেস্টুরেন্ট। এটি বর্তমানে এলাকার তরুণদের জন্য বিনোদন ও সামাজিক মেলামেশার এক নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

‘বন্ধুদের আড্ডা’ শুধু একটি খাবারের জায়গা নয়, এটি একটি সামাজিক মিলনস্থল। গ্রামীণ পরিবেশে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ এই রেস্টুরেন্টে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক খাবারের পাশাপাশি রয়েছে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প-আড্ডার জন্য আরামদায়ক পরিবেশ। রেস্টুরেন্টের সজ্জা ও খোলামেলা বসার জায়গা দর্শনার্থীদের মনে গ্রামীণ সৌন্দর্যের সঙ্গে আধুনিকতার এক অনন্য মিশ্রণ তৈরি করে।

বুলবুল হোসেন বলেন, “আমরা তিন বন্ধু মিলে ভেবেছিলাম, আমাদের এলাকায় এমন একটি জায়গা দরকার যেখানে মানুষ খেতে এসে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারে। এই রেস্টুরেন্ট শুধু ব্যবসা নয়, আমাদের এলাকার মানুষের জন্য একটি উপহার।”

তিনি আরও জানান, স্থানীয় উৎপাদিত তাজা উপকরণ ব্যবহার করে খাবার তৈরি করা হয়, যা স্বাস্থ্যসম্মত ও স্বাদে অতুলনীয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মাষ্টার ওসমান গনি বলেন, “এর আগে আমাদের এলাকায় এমন কোনো জায়গা ছিল না যেখানে পরিবার নিয়ে এসে ভালো সময় কাটানো যায়। এখন ‘বন্ধুদের আড্ডা’ আমাদের জন্য একটি প্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে।” শুধু স্থানীয়রাই নয়, রাজশাহী শহর ও আশপাশের এলাকা থেকেও অনেকে এখানে আসছেন সুস্বাদু খাবার ও মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে।

রেস্টুরেন্টটি স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ১৫ জন স্থানীয় তরুণ-তরুণী কাজ করছেন। এছাড়া, স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি কাঁচামাল কেনার ফলে কৃষকরাও উপকৃত হচ্ছেন।

‘বন্ধুদের আড্ডা’ ইতিমধ্যে বাগমারার হাট গাঙ্গোপাড়াকে একটি নতুন পরিচিতি দিয়েছে। তিন বন্ধুর এই উদ্যোগ কেবল একটি রেস্টুরেন্টই নয়, এটি স্থানীয় তরুণদের জন্য একটি অনুপ্রেরণার উৎসও বটে। ভবিষ্যতে তারা এই রেস্টুরেন্টকে আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছেন এবং স্থানীয় সংস্কৃতি ও খাবারের প্রচারে আরও কাজ করতে চান। এখানে সেমিনার কক্ষ রয়েছে যেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। বন্ধুদের আড্ডা রেস্টুরেন্ট চালুর পর থেকেই প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসে এখানে।

এটি প্রমাণ করে, স্বপ্ন, বন্ধুত্ব আর পরিশ্রমের সমন্বয়ে যেকোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করা সম্ভব। ‘বন্ধুদের আড্ডা’ এখন হাট গাঙ্গোপাড়ার গর্ব, যা আগামী দিনে আরও উজ্জ্বল হবে বলে আশা করা যায়।

ট্যাগসঃ

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বাগমারায় ‘বন্ধুদের আড্ডা’ রেস্টুরেন্ট বদলে দিল তিন বন্ধুর জীবনের গল্প

আপডেট সময়ঃ ০৭:০৫:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

শামীম রেজা, বাগমারা, (রাজশাহী):

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল হাট গাঙ্গোপাড়ায় তিন বন্ধুর উদ্যোগে গড়ে উঠেছে একটি অনন্য রেস্টুরেন্ট, ‘বন্ধুদের আড্ডা’। এটি পশ্চিম বাগমারার হাট গাঙ্গোপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের একদম সামনে।

এই রেস্টুরেন্টটি দ্রুতই স্থানীয়দের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে এই জায়গাটি।

তিন বন্ধু বুলবুল আহমেদ, আব্দুল হাকিম নীরব এবং আব্দুল হান্নান। তিন বন্ধুর বাসা বাগমারার বিভিন্ন গ্রামে। তারা সবাই সরকারি চাকরি করে। তিন বন্ধুর মধ্যে বুলবুল আহমেদ যোগীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে, আব্দুল হাকিম নীরব রাজশাহীর মতিহার টেকনিক্যাল কলেজে এবং আব্দুল হান্নান খালগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক।

প্রতিষ্ঠা তারিখঃ ২০/১২/২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বন্ধুদের আড্ডা রেস্টুরেন্টে যাত্রা শুরু করে। সরকারি চাকরির পর অতিরিক্ত সময় কাজে লাগানোর সুযোগ খুজতে থাকে তিন বন্ধু। অবশেষে একটি সিদ্ধান্ত বদলে দিয়েছে তাদের জীবন।

তিন বন্ধুর স্বপ্ন আর পরিশ্রমের ফসল এই রেস্টুরেন্ট। এটি বর্তমানে এলাকার তরুণদের জন্য বিনোদন ও সামাজিক মেলামেশার এক নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

‘বন্ধুদের আড্ডা’ শুধু একটি খাবারের জায়গা নয়, এটি একটি সামাজিক মিলনস্থল। গ্রামীণ পরিবেশে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ এই রেস্টুরেন্টে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক খাবারের পাশাপাশি রয়েছে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প-আড্ডার জন্য আরামদায়ক পরিবেশ। রেস্টুরেন্টের সজ্জা ও খোলামেলা বসার জায়গা দর্শনার্থীদের মনে গ্রামীণ সৌন্দর্যের সঙ্গে আধুনিকতার এক অনন্য মিশ্রণ তৈরি করে।

বুলবুল হোসেন বলেন, “আমরা তিন বন্ধু মিলে ভেবেছিলাম, আমাদের এলাকায় এমন একটি জায়গা দরকার যেখানে মানুষ খেতে এসে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারে। এই রেস্টুরেন্ট শুধু ব্যবসা নয়, আমাদের এলাকার মানুষের জন্য একটি উপহার।”

তিনি আরও জানান, স্থানীয় উৎপাদিত তাজা উপকরণ ব্যবহার করে খাবার তৈরি করা হয়, যা স্বাস্থ্যসম্মত ও স্বাদে অতুলনীয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মাষ্টার ওসমান গনি বলেন, “এর আগে আমাদের এলাকায় এমন কোনো জায়গা ছিল না যেখানে পরিবার নিয়ে এসে ভালো সময় কাটানো যায়। এখন ‘বন্ধুদের আড্ডা’ আমাদের জন্য একটি প্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে।” শুধু স্থানীয়রাই নয়, রাজশাহী শহর ও আশপাশের এলাকা থেকেও অনেকে এখানে আসছেন সুস্বাদু খাবার ও মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে।

রেস্টুরেন্টটি স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ১৫ জন স্থানীয় তরুণ-তরুণী কাজ করছেন। এছাড়া, স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি কাঁচামাল কেনার ফলে কৃষকরাও উপকৃত হচ্ছেন।

‘বন্ধুদের আড্ডা’ ইতিমধ্যে বাগমারার হাট গাঙ্গোপাড়াকে একটি নতুন পরিচিতি দিয়েছে। তিন বন্ধুর এই উদ্যোগ কেবল একটি রেস্টুরেন্টই নয়, এটি স্থানীয় তরুণদের জন্য একটি অনুপ্রেরণার উৎসও বটে। ভবিষ্যতে তারা এই রেস্টুরেন্টকে আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছেন এবং স্থানীয় সংস্কৃতি ও খাবারের প্রচারে আরও কাজ করতে চান। এখানে সেমিনার কক্ষ রয়েছে যেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। বন্ধুদের আড্ডা রেস্টুরেন্ট চালুর পর থেকেই প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসে এখানে।

এটি প্রমাণ করে, স্বপ্ন, বন্ধুত্ব আর পরিশ্রমের সমন্বয়ে যেকোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করা সম্ভব। ‘বন্ধুদের আড্ডা’ এখন হাট গাঙ্গোপাড়ার গর্ব, যা আগামী দিনে আরও উজ্জ্বল হবে বলে আশা করা যায়।