১০:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫
সংবাদ শিরোনামঃ
বিএডিসি’র সার ডিলারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

আলিফ হোসেন,তানোরঃ
- আপডেট সময়ঃ ১০:২৮:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫
- / ২ বার পড়া হয়েছে।

আলিফ হোসেন,তানোরঃ
রাজশাহী অঞ্চলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের(বিএডিসি)সার ডিলারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান,তথ্য গোপণ করে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া এসব সার ডিলারদের কারণে এলাকায় সারের সংকট দেখা দিয়েছে। সার আছে, সার নেই– এমন গোলকধাঁধায় কৃষককুল। সরকার বলছে, ডিলারের গুদাম সারে ভরা। বিপরীতে ডিলাররা প্রচার করছেন, তাদের গুদামে সারের খরা।
কৃষকদের অভিযোগ, গুদামে মজুত রেখে ডিলাররা বলছেন, ‘সার নেই।’ তবে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দিলে তাদের কাছেই মিলছে যত খুশি তত। একশ্রেণীর ডিলার ও আওয়ামী লীগের পুরোনো মোড়লরা এখনও ঘোরাচ্ছেন ছড়ি। কিছু আওয়ামী লীগ নেতা কৃত্রিম সার সংকট তৈরি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার খেলায় মেতেছেন বলে মনে করছেন কৃষকগণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মান্দা উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) আব্দুস সামাদ তথ্য গোপণ করে বিএডিসির সার ডিলার হয়েছেন।তিনি সাবাইহাটে ব্যবসা করছেন। কিন্ত্ত নীতিমালা অনুযায়ী কোনো জনপ্রতিনিধি ডিলার হতে পারবেন না। এবিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুস সামাদ বলেন,তিনি তার ডিলারসীপ অন্যর নামে হ্যান্ডোভার করার উদ্যোগ নিয়েছেন।তিনি বলেন,তার বিষয়ে অফিসের লোকজন জানেন।
এছাড়াও আত্রাই উপজেলার নওদুলী বাজারের মেসার্স হাজী স্টোর ও মেসার্স ভাই ভাই টেড্রার্স নিজেরা কোনো ব্যবসা করেন না,বাজারে তাদের কোনো গুদাম নাই। তবে হাজী স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী সম্রাট হোসেন ও ভাই ভাই টেড্রার্সের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল আলিম উভয়েই এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে গত ২৯ জুন বিএডিসির একটি প্রতিনিধি দল আত্রাই উপজেলার নওদুলী বাজারের এই দুই ডিলারের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সূত্র: (১) মহাব্যবস্থাপক (সার ব্যবস্থাপনা), বিএডিসি, ঢাকা দপ্তরের পত্র নম্বরঃ১২৩৬ তারিখ: ১৬ জুন, ২০২৫ খ্রি এবং (২) মহাব্যবস্থাপক (সার ব্যবস্থাপনা), বিএডিসি, ঢাকা দপ্তরের পত্র নম্বর: ১৫৭৪ তারিখ: ১৭ জুলাই, ২০২৫ খ্রি। সূত্রোস্থপত্রের নির্দেশনার আলোকে জানানো যাচ্ছে যে, নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায় বিএডিসি’র বীজ ডিলার হতে নিবন্ধিত নিম্নবর্ণিত সার ডিলারদ্বয়ের বিষয়ে বিগত ২৯ জুন, ২০২৫ খ্রি. তারিখে সরেজমিনে তদন্ত করা হয়। তদন্তকালে উল্লিখিত ডিলারদের আত্রাই উপজেলার নওদুলী বাজারে সার সংরক্ষণ বা বিক্রয়ের জন্য কোন গুদাম-দোকানঘর পাওয়া যায় নি। বিষয়টি নিয়ে এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ী, অন্যান্য ডিলার ও প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় সার সংরক্ষণ ও বিক্রয়ের জন্য উক্ত ডিলারদ্বয়ের কোন দোকান বা গুদামঘর নওদুলী বাজার এলাকায় নেই এবং উক্ত ডিলারদের নিকট থেকে সাধারণ কৃষকগণ কোন সার বা বীজ পান না সমর্থনে এলাকাবাসী গণস্বাক্ষর করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আপনার সহিত আলোচনাক্রমে আপনাকে সঙ্গে নিয়ে পুনরায় তাদের গুদাম ও বিক্রয়কেন্দ্র পরিদর্শনে যাওয়া হয়। উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নওগাঁ হতে জারিকৃত মাসিক উপবরাদ্দে নওদুলী বাজার উল্লেখ করে উপবরাদ্দ চালু থাকলেও প্রকৃতপক্ষে উক্ত বাজারে তারা কোন সার রাখেন না এবং আশেপাশের কোন এলাকায় তাদের এসাইনও করা হয় নাই। তদুপরি আপনার সহিত পার্শ্ববর্তী পালসাস্থ মেসার্স নূরবানু নামক ফিলিং স্টেশনে গিয়েও তাঁদের সার ও বীজ রাখার মতো কোন গুদাম বা বিক্রয়কেন্দ্র পাওয়া যায় নি এবং তাদের নামে মাসিক উপবরাদ্দকৃত সারের মজুদ রেজিস্ট্রার, বিক্রয় রেজিস্ট্রার, সাইনবোর্ড ও মূল্য তালিকা দেখতে চাইলে তারা দেখাতে পারেন নি। উল্লেখ্য যে, তদন্তের বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক একটি ক্যাশমেমো বহিতে জুন/২০২৫ মাসের বিক্রয়কৃত সার লিপিবদ্ধ করে উপস্থাপন করেন। কিন্তু পূর্ববর্তী মাসের কোন ক্যাশমেমো তারা উপস্থাপন করতে পারেন নি। এমতাস্থায়, উল্লিখিত ডিলারদ্বয়ের তদন্তে প্রতীয়মান হয় যে, “বিএডিসি’র বীজ ডিলার হতে বিএডিসি’র সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ পদ্ধতি এবং শর্তাবলী-২০১০” এর ০৪, ০৭, ১০ ও ১৮ নম্বর ধারা লংঙ্ঘিত হয়েছে। যার ফলে উক্ত শর্তাবলীর ২৪ নম্বর ধারা মোতাবেক তাদের সার ডিলার লাইসেন্স বাতিলের পর্যায়ে পড়ে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় মতামত প্রেরণের জন্য আপনাকে অনুরোধ জানানো হল।
অনুলিপি প্রেরণঃ
১। জেলা প্রশাসক, নওগাঁ ও সভাপতি জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি, নওগাঁ।
২। উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নওগাঁ ও সদস্য সচিব, জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি, নওগাঁ।
৩।উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সভাপতি, উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি, আত্রাই, নওগাঁ।
৪। মহাব্যবস্থাপক (সার ব্যবস্থাপনা) মহোদয়ের সহকারী ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, বিএডিসি, ঢাকা।
৫। সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, বিএডিসি, বীজ ডিলার এসোসিয়েশন, নওগাঁ জেলা ইউনিট, নওগাঁ।
অথচ এখানো এই দুটি ডিলারসীপ বাতিল করা হয়নি। এনিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে বিএডিসির যুগ্ম-পরিচালক (সার) জুলফিকার আলী বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ আমরা তদন্তের সময় তাদের দোকান বা গুদামের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন,এবিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। এবিষয়ে আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রসনজিৎ তালুকদার বলেন, বিএডিসি তাদের মতো তদন্ত করেছেন। তিনি বলেন, বিএডিসি তদন্ত করে তাদের মতামত চেয়েছেন। তিনি আরো বলেন,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্যারের সঙ্গে কথা বলে মতামত দেয়া হবে। এতোদিনেও কেনো মতামত দেয়া হয়নি এই প্রশ্নের কোনো সদোত্তর না দিযে তিনি এড়িয়ে গেছেন।#
ট্যাগসঃ